নার্সিং পড়ার জন্য সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং পড়ার সুযোগ রয়েছে।সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি পরীক্ষা সাধারণত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (BNMC) এর অধীনে পরিচালিত হয়। এগুলোতে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, বি.এসসি ইন নার্সিং, পোস্ট-বেসিক বি.এসসি ইন নার্সিং এবং অন্যান্য নার্সিং সংক্রান্ত কোর্স করানো হয়।
বাংলাদেশে সরকারি নার্সিং কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৪৩টির বেশি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। এসব ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কোর্স চালু রয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
- এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অন্তত জিপিএ ২.৫০ (প্রতিটি পরীক্ষায়)।
- বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা আবশ্যক।বি.এসসি ইন নার্সিং (ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং - BSc in Nursing):
- এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.০০ বা তার বেশি।
- বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে এবং জীববিজ্ঞান (Biology) বিষয় থাকতে হবে।
পোস্ট-বেসিক বি.এসসি ইন নার্সিং:
- ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সম্পন্ন করা থাকতে হবে।
- বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (BNMC) কর্তৃক নিবন্ধিত নার্স হতে হবে।
বয়সসীমা:
সাধারণত ১৭-২২ বছর (ডিপ্লোমা/বি.এসসি নার্সিং এর ক্ষেত্রে)।
বাংলাদেশের কোথায় পড়বেন নার্সিং?
সরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট:
বাংলাদেশে সরকারি নার্সিং কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নার্সিং কলেজ:
1. ঢাকা নার্সিং কলেজ – ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন।
2. সোহরাওয়ার্দী নার্সিং কলেজ – শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
3. মুগদা নার্সিং কলেজ – মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
4. চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ – চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন।
5. রাজশাহী নার্সিং কলেজ – রাজশাহী মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন।
6. সিলেট নার্সিং কলেজ – সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন।
7. বরিশাল নার্সিং কলেজ – বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন।
8. ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজ – ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন।
সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটসমূহ:
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৪৩টির বেশি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। এসব ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কোর্স চালু রয়েছে।
বেসরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট:
বাংলাদেশে বেশ কিছু বেসরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেখানে নার্সিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি নার্সিং কলেজ:
1. ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (USTC) – চট্টগ্রাম।
2. ইউনাইটেড কলেজ অব নার্সিং – ঢাকা।
3. হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট নার্সিং কলেজ – ঢাকা।
4. সিআরপি নার্সিং কলেজ – সাভার, ঢাকা।
5. ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট – কল্যাণপুর, ঢাকা।
6. গ্রীন লাইফ নার্সিং কলেজ – ঢাকা।
7. আশিয়ান নার্সিং কলেজ – উত্তরা, ঢাকা।
8. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (BSMMU) – ঢাকা।
নার্সদের কাজের ধরন
নার্সদের কাজের ধরন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। সাধারণত, নার্সরা রোগীর যত্ন নেওয়া, চিকিৎসকদের সহায়তা করা এবং হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিচে নার্সদের কাজের প্রধান ধরনগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. ক্লিনিক্যাল নার্সিং (Clinical Nursing)
এটি নার্সদের মূল ভূমিকা, যেখানে তারা সরাসরি রোগীদের সেবা প্রদান করেন।
ক) হাসপাতালের নার্স (Hospital Nurse)
রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা।ওষুধ প্রদান করা এবং ইনজেকশন দেওয়া।রোগীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা এবং চলাফেরায় সাহায্য করা।রোগীর অবস্থা পরিবর্তন হলে চিকিৎসককে জানানো।রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ করা।
খ) আইসিইউ ও সিসিইউ নার্স (ICU & CCU Nurse)
গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বিশেষ যত্ন নেওয়া।লাইফ সাপোর্ট, ভেন্টিলেটর, এবং অন্যান্য বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিচালনা করা।চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী রোগীর অবস্থা মনিটর করা।
গ) অস্ত্রোপচার সহকারী নার্স (Surgical Nurse)
অপারেশন থিয়েটারে সার্জনের সহকারী হিসেবে কাজ করা।অস্ত্রোপচারের সময় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা।অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের যত্ন নেওয়া।
ঘ) শিশু ও প্রসূতি নার্স (Pediatric & Maternity Nurse)
নবজাতক ও শিশুদের যত্ন নেওয়া।প্রসূতি মায়েদের প্রসব-পরবর্তী যত্ন প্রদান করা।
জন্মের পর শিশু ও মায়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
২. কমিউনিটি নার্সিং (Community Nursing)
এরা সাধারণত হাসপাতালের বাইরে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কাজ করেন।
ক) কমিউনিটি হেলথ নার্স (Community Health Nurse)
গ্রাম ও শহরের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করা।টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা।মা ও শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া।
খ) স্কুল নার্স (School Nurse)
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া।
স্কুলে স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৩. মানসিক স্বাস্থ্য নার্সিং (Mental Health Nursing)
মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের সেবা ও কাউন্সেলিং করা।
ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে রোগীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা।
রোগীদের পরিবারকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া।
৪. প্রশাসনিক ও গবেষণা নার্সিং (Administrative & Research Nursing)
ক) নার্সিং সুপারভাইজার বা ম্যানেজার
হাসপাতালের নার্সদের পরিচালনা করা।
রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা করা।
নার্সিং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
খ) নার্সিং গবেষক (Nursing Researcher)
নতুন চিকিৎসা ও রোগীদের যত্নের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করা।
স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত নীতিমালা উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
৫. বিশেষায়িত নার্সিং (Specialized Nursing)
- অ্যাম্বুলেন্স নার্স – জরুরি রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে সেবা প্রদান।
- ফ্লাইট নার্স – এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের সেবা প্রদান।
- অর্থোপেডিক নার্স – হাড় ও জয়েন্ট সমস্যাগ্রস্ত রোগীদের যত্ন নেওয়া।
- অনকোলজি নার্স – ক্যান্সার রোগীদের সেবা প্রদান।
নার্সরা স্বাস্থ্যসেবার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের কাজের ধরন নির্ভর করে রোগীর চাহিদা ও পরিবেশের ওপর। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, এনজিও, কমিউনিটি হেলথ সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় নার্সদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।